
হাসান মাহমুদ: পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সুরক্ষা, ফসল উৎপাদন ও কৃষকদের সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে বরিশালের গৌরনদীতে মৃতপ্রায় ২০ কিলোমিটার খাল পূনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, বিএডিসি ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অধিকাংশ খালের খনন কাজ শেষ করা হয়েছে।
এরমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিএডিসি’র মাধ্যমে সাড়ে ছয় এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পূনঃখনন সম্পন্ন হওয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
দখল-দূষন আর দীর্ঘদিন যাবত খনন না করায় মৃতপ্রায় খালগুলো পূনঃখননের ফলে জোয়ারের পানি ঢুকে খালগুলো নব যৌবন ফিরে পেয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন উপজেলার বার্থী, সরিকল ও মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে খাল পূনঃখননের বাস্তব চিত্র।
মাহিলাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম শরিফাবাদ গ্রামের একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম শরিফাবাদ খালটি দীর্ঘ বছর যাবত খনন না করায় জোয়ারের পানি উঠতে পারতোনা। বর্তমানে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে খালটি পূনঃখনন করায় প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক উপকৃত হবে।
বার্থী এলাকার একাধিক কৃষকরা জানান, পশ্চিম বার্থী খালটি দীর্ঘ ২০ বছরের পূনঃখনন হয়নি। যে কারনে খালটি মরা খালে পরিণত হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য পূর্বে বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা যেতনা এবং কৃষকদের দিগুন অর্থ খরচ করতে হতো। বর্তমানে বিএডিসি খালটি পূনঃখনন করে দেওয়া সেচ সংকট কমে গিয়েছে। এতে উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি খরচ কমে যাবে। একই কথা জানিয়েছেন, সরিকলের আধুনা ও হোসনাবাদ গ্রামের কৃষকেরা।
বিএডিসি’র বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠী ও পিরোজপুর সেচ উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ মুরাদ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৌরনদীতে সাড়ে ছয় কিলোমিটার খাল পূনঃখনন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে খনন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খনন কাজ সার্বক্ষনিক পরিদর্শনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।
বিএডিসি গৌরনদী অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ডিজাইন অনুযায়ী খালগুলো পূনঃখননের জন্য প্রতিনিয়ত তদারকী করা হচ্ছে। খালের পূনঃখনন কাজ সম্পন্ন হলে দুই হাজার একশ’ একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।
তিনি আরও জানান, বর্ষার শেষ সময়ে কৃষকদের জমি থেকে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রতি কিলোমিটার খালে চারটি করে ওয়াটার পাস আউটলেট নির্মানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো.অহিদুর রহমান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় মাহিলাড়া ও সরিকলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে বারো কিলোমিটার খাল পূনঃখনন করা হয়েছে। খালগুলো পূনঃখননের ফলে হাজার হাজার কৃষক সেচ সুবিধা পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পূর্বে বোরো মৌসুমে পানির জন্য কৃষকদের বেগ পেতে হতো। যেই এলাকায় খালগুলো পূনঃখনন করা হয়েছে সেই এলাকায় এখন আর সেচ সংকট নেই। যে কারনে কৃষকদের মধ্যে স্তস্থি ফিরে এসেছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, খালগুলো খননের ফলে পরিবেশ সুরক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীব বৈচিত্র রক্ষা ও দেশীয় প্রজাতীর মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভরাট হওয়া খালগুলো খনন করায় কৃষির প্রসার যেমন ঘটবে, তেমনি কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, টরকী-সাউদের খালের এক কিলোমিটার এলাকা দখলের কারনে নিচিহ্ন হওয়ার পর্যায়ে ছিলো। দখলদারদের উচ্ছেদ করে সেই এক কিলোমিটার খাল পূনঃখনন করা হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য মরা খালগুলো চিহ্নিত করে পূনঃখননের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে।
More Stories
খাল পরিস্কারে এগিয়ে আসলেন তরুণ সমাজ
হাসি নেই কৃষকের মুখে
সেচ প্রকল্পের উদ্বোধণ করলেন বিএডিসি চেয়ারম্যান