
*একের পর এক হামলা *নিরব থানা পুলিশ
স্মার্ট সংবাদ ডেক্স :
উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌর কাউন্সিলরগণ প্রতিদিন একই ভবনে (উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে) ন্যায় নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নাগরিক সেবা দিয়ে আসছেন। সেই উপজেলা পরিষদ ভবনটি এখন সাধারণ জনগনের কাছে চরম আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ ভবনের (নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়) মধ্যে প্রকাশ্যে একের পর এক হামলার ঘটনায় সাধারণ জনগনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটলেও সর্বশেষ সরকারি অফিসের মধ্যে তিন ইউপি সদস্যর ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রমতে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি অফিসের মধ্যে বসে হামলার সময় আসবাবপত্র ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করা সত্বেও থানার ওসি মামলা গ্রহণ না করে একটি সাধারণ ডায়েরী করেই দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
এনিয়ে খোঁদ উপজেলা প্রশাসনের অসংখ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পাশাপাশি থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নাগরিক সেবা নিতে আসা অসংখ্য ভূক্তভোগীরা বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অধিকাংশ দপ্তর অফিস চলাকালীন সময় রাজনৈতিক দলের নেতাদের দখলে থাকে। তাদের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কথাবলা যায়না।
এমনকি উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিনাকারণে অফিস চলাকালীন সময়ে ওইসব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। তারা পরিচিতজনদের দেখলেই কি কারণে উপজেলায় এসেছে তার বাখ্যা চান। এতে প্রতিনিয়ত চরম বিব্রতকর অবস্থায় পরছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগন।
তারা আরও বলেন, নাগরিক সেবা দিতে উপজেলার অধিকাংশ দপ্তরের কর্মকর্তারা চরম আন্তরিক। কিন্তু ওই প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের কারণে তাদের মুখও বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হিরা অভিযোগ করে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেল তিনটার দিকে তিনিসহ ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আহাদুল ইসলাম ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন খলিফা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আসেন। এসময় তিনি (ইউএনও) সরকারি কাজে অফিসের বাহিরে থাকায় তারা অফিস সহকারীর রুমে অবস্থান করেন।
ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হিরা আরও বলেন, ওই রুমে অবস্থানকালীন আকস্মিকভাবে উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আবু বক্কর গাজীর নেতৃত্বে তার ২০/২৫ জন সহযোগিরা অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাকে (হিরা) রক্তাক্ত জখমসহ অন্য দুই ইউপি সদস্যকে মারধর করেন।
হামলাকারীরা ওই কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হিরা এবং ইউএনও কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গৌরনদী মডেল থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানার ওসির নির্দেশে ইউপি সদস্যর অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলা রুজু করা হলেও ইউএনও কার্যালয়ের অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও রহস্যজনক কারণে থানার ওসি’র পক্ষপাতমূলকভাবে ইউএনও কার্যালয়ের অভিযোগ উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্রমতে, তিনজন ইউপি সদস্যর ওপর প্রকাশ্যে হামলার একাধিক ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরেছে। এতে হামলাকারীদের স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন হিরার দায়ের করা অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত আসামি করা হয়েছে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকা নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধাকে। এনিয়েও জনমনে ওসির পক্ষপাতমূলক আচারনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, হামলার বিষয়টি আমি ইউনিয়ন পরিষদে বসে শুনেছি। আর কারা কি কারণে হামলা চালিয়েছে সেবিষয়টিও আমার জানা নেই। সেখানে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই সামাজিকভাবে হয়রানী করার জন্য মামলাটি রুজু করেছেন।
অপরদিকে ইউপি সদস্যর দায়ের করা মামলা ৩ নম্বর আসামি উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফুয়াদ হোসেন এ্যানি বলেন, ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন হিরা ও তার সহযোগিরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্থানীয় দানব হিসেবেখ্যাত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের নির্দেশে উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আবু বক্কর গাজীর একটি চোখ উপরে ফেলেছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে সে (হিরা) আত্মগোপনে রয়েছে। হঠাত করে গত ৬ মে বিকেলে মাক্স পড়াবস্থায় হিরাকে উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে দেখে কয়েকজন যুবক তাকে ধাওয়া করে। ওইসময় পরে গিয়ে হয়তো তার হাত-পা কেটেছে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক আবু বক্কর গাজীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ইউপি সদস্যর দায়ের করা মামলায় নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম হাফিজ মৃধা, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবু বক্কর গাজী, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফুয়াদ হোসেন এ্যানিসহ সাতজনের নামোল্লেক করে ১৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি একই কার্যালয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়ার সামনে বসে বিচারপ্রার্থী এক মুসুল্লীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওইসময়ও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকায় ছিলেন ওসি ইউনুস মিয়া।
এরপূর্বে উপজেলা পরিষদ চত্বরে (ইউএনও কার্যালয়ের সামনে) বসে সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি নেতা মনজুর হোসেন মিলনসহ তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, হামলার ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের না করলে আমাদের কিছুই করার থাকেনা। ইউপি সদস্যর দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, একই ঘটনায় দুইটি অভিযোগ না নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরীভূক্ত করা হয়েছে। এটা দোষের কিছু নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সার্বিক বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি বলেন, হামলার ঘটনার সময় আমি সরকারি কাজে বাহিরে ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত ফিরে আসি। এসে জানতে পারি হামলাকারীরা অফিস সহকারীর কক্ষে প্রবেশ করে ইউপি সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
পাশাপাশি অফিসের কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেছে। আমরা সিসিটিভি’র ফুটেজসহ বিভিন্ন ভিডিও সংগ্রহ করেছি। এ ঘটনায় প্রকৃত দায়ীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় এবং নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হবে।
More Stories
রুহুল আমিন হাওলাদারের জানাজা আজ বাদ যোহর
গৌরনদীতে ব্যাপক আয়োজনে কালী পূজা অনুষ্ঠিত
বরিশালে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী গ্রেপ্তার