
*জাতির উদ্দেশে ভাষণে সেনাবাহিনী প্রধান
স্মার্ট সংবাদ :
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে। সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার করা হবে অঙ্গীকার করে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন এবং শান্ত থেকে আমাকে সহযোগিতা করুন।
কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বিকেল চারটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ভাষণে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার আমরা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমি সব দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আশাহত হবেন না। ইনশা আল্লাহ, আপনাদের যত দাবি আছে সেগুলো আমরা পূরণ করব এবং দেশে একটা শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।
আপনারা আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেন। দয়া করে ভাঙচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত হন।
দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান আরও বলেন, আমি নিশ্চিত যে আপনারা যদি আমার কথামতো চলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যদি কাজ করেন। নিঃসন্দেহে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। আপনারা আমাকে দয়া করে সাহায্য করেন। মারামারি করে এই সংঘাতের মাধ্যমে আমরা আর কিছু অর্জন (অ্যাচিভ) করতে পারব না। আর কিছু পাব না।’
তিনি বলেন, সুতরাং দয়া করে আপনারা সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ, সমস্ত অরাজকতা, সমস্ত সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। ইনশাআল্লাহ, আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হবো।
সেনাপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার আমরা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখেন। আমি সব দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।
আন্দোলনরতদের সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ছাত্রদের কাজ হচ্ছে শান্ত হওয়া এবং আমাদের সহযোগিতা করা। আন্দোলনরত যারা আছেন তারা সবাই ঘরে ফিরে যান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আদেশ দিয়েছি, সেনাবাহিনী গোলাগুলি করবে না, পুলিশ গোলাগুলি করবে না। আমার এ বক্তব্যের পরে পরিস্থিতি উন্নতি হবে এবং আমরা সুন্দর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি।’
চলমান কারফিউ বহাল থাকবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশ শান্ত হয়ে গেলে কারফিউর দরকার নেই। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত মাঠে সেনাবাহিনী থাকবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কত সদস্য হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, এখনো খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে। সোমবার রাতের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সমাধান যাওয়ার চেষ্টা করব। ২/১ দিন আমাদের সময় দেওয়া লাগতে পারে।
শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুলকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
শিক্ষার্থীরা আসিফ নজরুলকে মান্য করেন; সেই কারণে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হবেন।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকেছিলাম। সময় কম ছিল। যাদের ডেকেছি তারা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
এর আগে সেনাপ্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো নেতা ছিলেন না।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, গণসংহতির জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।
More Stories
জরিমানার বিধান না থাকায় বাড়ছে বকেয়া
অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শাটডাউন : ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি
মহাসড়ক অবরোধ করে বিএনপির গণঅবস্থান : দক্ষিণাঞ্চল অচলের হুমকি