June 13, 2025

স্মার্ট সংবাদ

স্মার্ট সংবাদ

সবুজ চাঁদরে ঢেকে দেওয়া হবে-অজপাড়া গ্রাম

*গার্ডেনিং হোসনাবাদ

আরিফিন রিয়াদ :

বৃক্ষ বা গাছ। শব্দটি দুটি বর্ণের হলেও এ পৃথিবীতে প্রাণীকুলের জীবন-জীবিকার নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হলো এটি। সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্যলীলার মধ্যে অন্যতম এই বৃক্ষের ওপর মানবজাতি ও অন্যান্য প্রাণীকূল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।

আর প্রাণীদের বেঁচে থাকার প্রধান ও মূল উপকরণ অক্সিজেন উৎপন্ন ও নির্গত হয় এই বৃক্ষ থেকেই। তাই বৃক্ষকে মানব জীবনের ছায়াস্বরূপ বলা হয়।

এছাড়াও পৃথিবীতে মানুষের খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, ঘরবাড়ি তৈরি, মাটির ক্ষয়রোধ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সঠিক রাখা, পরিস্কার পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা, কৃষি জমির উৎপাদন বৃদ্ধি করা, বন্যা, জলোচ্ছ¡াস, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও খরা প্রতিরোধ ছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন এবং বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রেও বৃক্ষের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব।

বৃক্ষ থেকে আমরা জীবন রক্ষাকারী নানা রকমের ওষুধ পেয়ে থাকি। তাই আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, অর্থনীতি, আবহাওয়া এবং জলবায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।

এ কারণেই বরিশালের গৌরনদী উপজেলার প্রত্যন্ত সরিকর ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামকে ওষুধি গাছ, ফুল ও ফলে সমৃদ্ধ একটি বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ শুরু করেছেন ওই এলাকার সন্তান বৃক্ষপ্রেমি মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল

তিনি পুরো গ্রামটিকে সবুজ চাঁদরে ঢেকে সবুজায়ন করতে এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন “গার্ডেনিং হোসনাবাদ”।

বর্তমানে তিনি (পাভেল) দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন একই গ্রামের অর্ধশত তরুন স্বেচ্ছাসেবক।

বৃক্ষপ্রেমি উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান পাভেলের এই বাগান তৈরির পরিকল্পনায় রয়েছে স্কুল ভিত্তিক বাগান তৈরি।

যেখানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০টি করে ফল গাছের মধ্যে থাকবে একটি ওষুধি, দুইটি ফুল, পাঁচটি দেশী ফল, একটি বিদেশী ও একটি শোভাবর্ধনকারী গাছ। তাছাড়া ফুলের বাগানে থাকবে মাল্টিকালার ফুলের বীজ, ৫০টি স্বল্পমেয়াদি ফুলের চারা ও পাঁচটি দীর্ঘমেয়াদি ফুলের চারা।

হোসনাবাদ ইজিবাইক স্ট্যান্ড থেকে উত্তর দিকের বাঁধ পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দুইশটি ফুল ও ওষুধি গাছের চারা লাগানো হবে। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাকবেন একদল স্বেচ্ছাসেবক।

এই প্রকল্প সফল হলে পর্যায়ক্রমে এলাকার প্রতিটি সড়কসহ হোসনাবাদের অন্যান্য রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও যে সকল স্বেচ্ছাসেবী এ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে বাগান তৈরি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও মেধা পুরস্কার হিসেবে গাছ বিতরণ।

প্রতিটি মসজিদের আঙ্গিনায় পাঁচটি করে দীর্ঘমেয়াদী ফুলের গাছ রোপন, রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে রাস্তার দুইপাশে ফুল ও ওষুধি গাছ রোপন, হোসনাবাদ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ওষুধি গাছ, ফুল ও ফলের গাছ লাগাতে সহায়তা করা। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে একটি করে বাগান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বৃক্ষপ্রেমি মোস্তাফিজুর রহমান।

তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) হোসনাবাদ গ্রামকে সবুজ ভুবনে রূপান্তরের লক্ষ্যে নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ও হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধণ করেছেন বৃক্ষ প্রেমী মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল।

এসময় এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধশত ওষুধি, ফুল ও ফলের গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।

এ মহৎ কাজের সম্পৃক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা বলেছেন, আমাদের এই বৃহত্তর হোসনাবাদ গ্রাম তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আমরা মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল ভাইয়ের উদ্যোগে এই গ্রামটিকে সবুজায়ন করতে চাচ্ছি।

অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নিয়াজুল ইসলাম ফিরোজ খলিফা বলেন, আমাদের এলাকার সন্তান পাভেল যান্ত্রিক শহরে থেকেও তারমধ্যে এই বৃক্ষ প্রেম ও গ্রামকে সবুজায়নের মনোভাব সত্যিই প্রসংশনীয়।

হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকেই বৃক্ষরোপণ করেন কিন্তু এতে পরিবেশের উপকার হলেও আমাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন কাজে আসেনা। তবে গার্ডেনিং হোসনাবাদের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে যে গাছগুলো রোপন করা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ফুল এবং ওষুধি ফল গাছ। যা ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারে আসবে।

হোসনাবাদ নিজাম উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, গাছ আমাদের জীবনের ও পরিবেশের অন্যতম একটি অংশ। পুরো গ্রামকে গার্ডেনিং হোসনাবাদ করার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

বৃক্ষ প্রেমী মোস্তাফিজুর রহমান পাভেল বলেন, মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য গাছ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বৃক্ষরোপণ করা একান্ত দরকার। যেকোনো ফল ও ফসল উৎপন্ন হলে তা মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যেমে নিজ গ্রাম হোসনাবাদকে সবুজায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

আর এ উদ্যোগকে সফল করার জন্য একঝাঁক তরুন স্বেচ্ছাসেবীরা বিনাস্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

‍SmartSangbad Copyright © All rights reserved. | This Site Developed by Arifin Riad